x
CAPS

    Contact us

    • 51, Siddeswari Rd, Ramna, Dhaka.
    • +8801712017725
    • info@capsbd.org
    CAPS
    • Call us

      +8801712017725

    • Email

      info@capsbd.org

    • Web Mail
    • Home
    • Research & Publications
      • Journal Article
      • Books
      • Conference Paper
      • Newspaper Article
      • Research Reports
      • Policy Briefs
      • Working Papers
      • Infographics
    • Env. Laws
      • Env. Act
      • Env. Rule
      • Special-Others
    • Media & Events
      • Gallery
      • TV Coverage
      • Press Release
      • Events
    • About CAPS
      • About CAPS
      • Our Team
      • Partners
      • Verification
      • Career
    • Contact Us
    Logo

    Contact Info

    • 51 Siddeswari Road, Ramna Dhaka.
    • +8801712017725
    • info@capsbd.org

    12Mar

    দেশের বায়ুমান উন্নয়নে করণীয়

    by Prof. Dr. Ahmad Kamruzzaman Majumder,  0 Comments

    Bonikbarta| 12 March 2022

    বায়ুদূষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূল কারণ হলো, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে বায়ু, প্রভাব ফেলছে স্বাস্থ্যের ওপর। তাই এ মুহূর্তে যদি দূষণ রোধে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া না হয়, বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মকে বায়ুদূষণের কারণে অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় সাত মিলিয়ন মানুষের অকালমৃত্যু হয়। যার মধ্যে পরিবেষ্টিত বায়ুদূষণের কারণে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন এবং গৃহ অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণের কারণে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণের দিক দিয়ে ২০২০ ও ২০১৯ সালে শীর্ষ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ এবং বিশ্বের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা শহর। এ প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের ফলে মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট (এইচইআই) ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের (আইএইচএমই) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অন্তত ১ দশমিক ২৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ২০১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু ঢাকায় ১০ হাজার মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়। কয়েক বছর ধরেই বায়ুদূষণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। বর্তমান সময়ে বায়ুদূষণ এমন বেড়েছে যে তা মানুষের শরীরকেই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত করে না, মানসিক অবস্থাকেও বিপর্যস্ত করে তুলছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিভিন্ন শহর বসবাসের যোগ্যতা হারাচ্ছে। বসবাসযোগ্যতা ও নাগরিক সুবিধাগত দিক থেকে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর অবস্থানবিষয়ক জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশিত বিশ্বে বসবাসযোগ্য শহরের তালিকা ২০২১-এ অবসবাসযোগ্য শহরের অবস্থানে নেমে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আর ঢাকাকে অবসবাসযোগ্য শহরে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে যে নিয়ামকগুলো দায়ী, তার অন্যতম একটি ‘বায়ুদূষণ’।

    বায়ুদূষণের কারণ ও উৎস: বায়ুদূষণের প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে আবহাওয়াজনিত ও ভৌগোলিক কারণ উল্লেখযোগ্য। মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে ইটভাটা ও শিল্প-কারখানা, অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ, গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা থেকে নির্গত দূষক এবং বর্জ্য পোড়ানো থেকে বায়ুদূষণ হয়। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার আশপাশে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইটভাটা চালু থাকে। এ বছরে নানা সময়ে বায়ুর দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দিক থেকে ইটভাটায় উত্পন্ন বায়ুদূষকগুলো ঢাকা শহরের দিকে নিয়ে আসে। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে ইটভাটাগুলো ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ ভাগ দায়ী। এ থেকে ঢাকার বায়ুদূষণে ইটভাটার ভূমিকা বোঝা যায়। ভরা মৌসুমে ইটভাটা দৈনিক প্রায় ১০ টন কয়লা পোড়ায়। এক টন কয়লা পোড়ানোর ফলে প্রায় ২ দশমিক ৮ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড উত্পন্ন হয়। সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে (অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ ও বস্তুকণা১০), সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ডাই অক্সিন ও ফুরান নিঃসরিত হয়। এছাড়া ঢাকার ভেতরে তেজগাঁও, টঙ্গী, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের শিল্প এলাকাগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়। বায়ুদূষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং সমন্বয়হীন ও পরিকল্পনাবিহীন নির্মাণকাজ। বিআরটি, এমআরটি এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ঢাকা শহরে বায়ু দূষিত হচ্ছে। সারা বছর ঢাকার রাস্তাগুলো সমন্বয়হীনভাবে যত্রতত্র যখন তখন খোঁড়াখুঁড়ি করা হয় এবং দীর্ঘ সময় তা উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে। অন্যদিকে নির্মাণকাজে ব্যবহূত নির্মাণসামগ্রী খোলা অবস্থায় পরিবহনও বায়ুদূষণ ঘটায়। ফিটনেসবিহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ, পুরনো, লক্কড়ঝক্কড়-মার্কা গাড়ি এবং বিরামহীন যানজট বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের এক রিপোর্টে জানা যায়, ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ হালকা যানবাহন, ৬৯ শতাংশ ট্রাক, ৮৪ শতাংশ বাস ও ৮৭ দশমিক ২ শতাংশ মোটরসাইকেল ‘জাতীয় দূষণ মান’ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া যানজটের কারণে গাড়িগুলোকে অতিরিক্ত সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এবং অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করতে হচ্ছে, এতে বায়ুদূষণও বেড়ে যাচ্ছে। এরপর রয়েছে আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণ, যা সারা দেশের অনেক স্থানের বায়ুদূষণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এছাড়া ঢাকাসহ অন্যান্য শহরাঞ্চলের বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস গৃহস্থালি ও রান্নার চুলা। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় কাঠের কিংবা কয়লার চুলা ব্যবহার করার কারণে বায়ুদূষণের পরিমাণ বেশি লক্ষ করা যায়।

    বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণা: বাংলাদেশের ৬৪ জেলার বায়ুমান পরিস্থিতি-২০২১: বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ৬৪ জেলার শহরগুলোয় সাত ধরনের ভূমির ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ৩ হাজার ১৬৩টি স্থানের বায়ুমান উপাত্ত সংগ্রহ করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে। গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ প্রতি ঘনমিটারে ১০২ দশমিক ৪১ মাইক্রোগ্রাম ছিল; যা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ —এর আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ১ দশমিক ৫৭ গুণ বেশি। অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ —এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত জাতীয় আদর্শ বায়ুমান (দৈনিক) প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৬৪ জেলার গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ —এর অনুযায়ী গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এ তিনটি জেলা দূষণের শীর্ষে অবস্থান করছে এবং বায়ুমানক্রমে সব শেষে অবস্থান করছে মেহেরপুর, পটুয়াখালী ও মাদারীপুর জেলা। ৬৪টি জেলার তালিকায় মাদারীপুরের অবস্থান সর্বশেষ অর্থাৎ ৬৪তম। গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার গড় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ পরিমাণ যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ২৬৩ দশমিক ৫১, ২৫২ দশমিক ৯৩ ও ২২২ দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রাম। এটি আদর্শ মানের চেয়ে যথাক্রমে ৪ দশমিক শূন্য ৫, ৩ দশমিক ৮৯ ও ৩ দশমিক ৪২ গুণ বেশি এবং মেহেরপুর, পটুয়াখালী ও মাদারীপুর জেলার গড় অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা২.৫ —এর ঘনত্ব যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ৫৩ দশমিক ৩৭, ৫১ দশমিক ৪২ ও ৪৯ দশমিক শূন্য ৮ মাইক্রোগ্রাম। গবেষণা থেকে ৬৪টি জেলার মধ্যে শুধু ১০টি (১৫.৬২ শতাংশ) জেলায় বায়ুমান আদর্শ মাত্রার মধ্যে ছিল। এ জেলাগুলোর অবস্থান নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায়, ফলে দূষণের বিস্তৃতি কম হওয়ার একটি কারণ হতে পারে। অন্যদিকে সাত ধরনের ভূমির ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ ছিল মিশ্র এলাকায়, যার মান প্রতি ঘনমিটারে ১১১ দশমিক ৯০ মাইক্রোগ্রাম। এরপর বাণিজ্যিক (১১১.৪ মাইক্রোগ্রাম), রাস্তার সংযোগস্থল (১১০.৮ মাইক্রোগ্রাম), আবাসিক, শিল্প (১০৬.৭ মাইক্রোগ্রাম) ও সংবেদনশীল এলাকা (৯৭.৩ মাইক্রোগ্রাম) যথাক্রমে পাওয়া যায়। এদিক থেকে তুলনামূলক কম দূষণ পরিলক্ষিত হয় গ্রামীণ এলাকায়, যার মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯৪ দশমিক শূন্য ২ মাইক্রোগ্রাম।

    ঢাকা শহরের বায়ুমান সূচক ২০১৬-২১: ক্যাপসের অন্য একটি গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের, অর্থাৎ গত ছয় বছরের জানুয়ারির বায়ুমান সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল এ পাঁচ বছরের চেয়েও ২০২১ সালে গড় বায়ুদূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৭ শতাংশ। ২০২২ সালে জানুয়ারিতে ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯ দশমিক ৫২-তে এসে দাঁড়িয়েছে, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। গবেষণায় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরো দেখা যায়, জানুয়ারিতে ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি, বায়ুমান বেশির ভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। ক্যাপসের এক গবেষণায় দেখা যায়, গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ২ শতাংশ (৩৮ দিন) সময় ভালো বায়ু গ্রহণ করে। তবে এক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ (৫১০ দিন) চলনসই মানের বায়ু, ২৯ শতাংশ (৫৭৭ দিন) সংবেদনশীল বায়ু, ২২ শতাংশ (৪৪৩ দিন) অস্বাস্থ্যকর, ১৯ শতাংশ (৩৮৫ দিন) খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ২ শতাংশ (৩৭ দিন) দুর্যোগপূর্ণ বায়ু গ্রহণ করে। সাধারণত শীত মৌসুমে গড় বায়ুমান সূচক বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। ঋতুর দিক দিয়ে শীতকাল অপেক্ষাকৃত শুষ্ক, তাই এ সময়ে ধুলাবালির পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। ইটভাটাগুলো শুষ্ক মৌসুমে চলমান থাকে, বায়ুর দূষকগুলো প্রধানত আবহাওয়ার উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। শীতকালে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কম থাকে। ফলে এ সময়ে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। অন্যদিকে বর্ষাকালে ইটভাটাগুলো বন্ধ থাকে। অন্যদিকে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা দূষণের পরিমাণ কমিয়ে আনে। তাই জুন ও জুলাইয়ের মতো মাসে গড় বায়ুমান সূচক তুলনামূলক কম পাওয়া যায় সব বছরে।

    ঢাকা শহরে মৌসুমভিত্তিক বায়ুমান পরিস্থিতি

    ক্যাপস আরো একটি গবেষণা প্রকল্প করছে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরে, যেখানে ঢাকা শহরের ১০টি স্থানের বায়ুমান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করা হয়। ওই গবেষণার অংশ হিসেবে ঢাকা শহরের ১০টি স্থান যথাক্রমে আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, শাহবাগ, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ এলাকা, তেজগাঁও, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ ও গুলশান-২-এর বায়ুমানের তথ্য-উপাত্ত নিউজিল্যান্ডে প্রস্তুতকৃত US EPA সার্টিফাইড Areroqual S-৫০০ মেশিন দ্বারা সংগ্রহ করা হয়। এ গবেষণা থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে ১০টি স্থানের বস্তুকণা২.৫ ও বস্তুকণা ১০ —এর উপাত্তগুলো প্রাক-বর্ষা, বর্ষাকাল, বর্ষা-পরবর্তী, শীতকাল চারটি মৌসুমে বিভক্তির বিশ্লেষণে দেখা যায়, চার মৌসুমের মধ্যে শীতকালে দূষণের পরিমাণ অন্য মৌসুমের তুলনায় বেশি ছিল। শীতকালে গড়ে বস্তুকণা২.৫ —এর উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১০১ মাইক্রোগ্রাম এবং বস্তুকণা১০ —এর উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১২১ মাইক্রোগ্রাম। বর্ষা মৌসুমে গড়ে বস্তুকণা২.৫ উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৯ মাইক্রোগ্রাম এবং বস্তুকণা১০ —এর উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৬২ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ বর্ষাকালের তুলনায় শীতকালে বস্তুকণা২.৫ —এর পরিমাণ প্রায় ২ দশমিক ৫ গুণ বেশি এবং বস্তুকণা১০ —এর পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেশি ছিল। অন্যদিকে মাস অনুযায়ী ১০টি স্থানের গড় বস্তুকণা২.৫ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিসেম্বরে বস্তুকণা২.৫ প্রতি ঘনমিটারে ১০২ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায় এবং জুলাইয়ে ২৯ দশমিক শূন্য ১ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া যায়। এটি স্পষ্ট যে শীত মৌসুমে বর্ষা মৌসুমের তুলনায় বায়ুমান বেশি খারাপ থাকে।

    বায়ুদূষণ রোধে করণীয়: ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ রোধ করার জন্য স্বল্পমেয়াদি পদ্ধতিগুলো সবচেয়ে বেশি কার্যকর। বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ঢাকা শহর অস্বাভাবিক বা জরুরি পরিস্থিতিতে রয়েছে এবং এ সময় আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারি। সরকার নিম্নলিখিত কৌশল গ্রহণ করতে পারে, যা এ মুহূর্তে বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ তীব্র আকার ধারণ করে। সুতরাং দূষণ থেকে ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য উন্নত মানের মাক্স ব্যবহার করা ব্যক্তির জন্য একটি অস্থায়ী সমাধান হতে পারে। তবে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ কমাতে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাধ্যতামূলক। ঢাকা শহরে প্রতি শীত মৌসুমে ওয়াসা, কেবল নেটওয়ার্ক কোম্পানি, গ্যাস সাপ্লাই কোম্পানি ইত্যাদি তাদের সেবা সংস্কারের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করছে। যদি সব সংস্থা তাদের সংস্কারকাজের জন্য রাস্তা খননে একীকরণ প্রক্রিয়া বজায় রাখে তবে এটি নির্মাণ কার্যক্রম থেকে দূষণ হ্রাস করতে পারে। এছাড়া রাস্তা নির্মাণ বা খনন কাজগুলো নিয়মকানুন ও আইন মেনে করা হচ্ছে কিনা, সেদিকে সরকারকে অবশ্যই নজরদারি করতে হবে। সেক্ষেত্রে যেসব স্থানে নির্মাণকাজ চলমান সেসব স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে এবং রাজধানী শহরে বালি, মাটি বা নির্মাণসামগ্রী পরিবহনকারী ট্রাকগুলো যেন ঢেকে নেয়া হয়, তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।


    শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চে দিনে দুবার সড়কে পানি দেয়ার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের বেশকিছুসংখ্যক পানি ছিটানো যানবাহন রয়েছে। তাই ঢাকা শহরের ধুলাবালি সাময়িকভাবে কমাতে সরকার শীত মৌসুমে রাস্তায় ধুলা কমানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে পারে। সরকার সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করতে পারে যে প্রতিটি ভবনের কর্তৃপক্ষকে তাদের ভবনের সামনের রাস্তায় প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অন্তর নিজ উদ্যোগে পানি ছিটাতে অনুরোধ করতে পারে। আর এ কাজে বিল্ডিং কর্তৃপক্ষ এসি থেকে তৈরি পানি ব্যবহার করতে পারে। ঢাকা শহরে তিন লাখের বেশি এসি ব্যবহার করা হয়। তথ্যানুযায়ী ঘনীভবনের কারণে দুই টন ধারণক্ষমতার একটি এসি উপজাত হিসেবে প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় কমপক্ষে দুই লিটার পানি উৎপাদন করে, যা নিজ আঙিনায় দূষণ রোধে কাজে লাগানো যেতে পারে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। অতএব মেয়াদোত্তীর্ণ ও কম ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং কালো ধোঁয়া নির্গত যানবাহন আটক করা বায়ুদূষণ রোধে একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে। এক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর ধারা ৩৬ অনুযায়ী বিভিন্ন গাড়ি বা যানবাহন যেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ও কম ফিটনেসবিহীন সেগুলো রাজধানীর রাস্তায় চালানো সীমিত করলে দূষণের মাত্রা কমতে পারে। সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে গাড়ির জোড় ও বিজোড় নম্বরপ্লেট অনুযায়ী অসম ড্রাইভিং বা বিকল্প দিনের চলাচল প্রবর্তন করা যেতে পারে।

    লাইসেন্স ছাড়া চলমান সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এছাড়া ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় টায়ার পোড়ানো হয় এবং ব্যবহূত লিড অ্যাসিড ব্যাটারি (ইউল্যাব) কারখানাগুলো ঢাকার বায়ুকে দূষিত করছে। তাই দূষণের মাত্রা কমাতে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আবশ্যক। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনের পাশাপাশি রাস্তার পাশে বর্জ্য পোড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ উভয় সিটি করপোরেশনকে উন্মুক্ত বর্জ্য ফেলার পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি বস্তি এলাকায় উন্নত রান্নার চুলা ও মানসম্পন্ন জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিতকরণ শহর এলাকায় বায়ুর গুণগত মান উন্নত করতে অবদান রাখবে।

    ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ সমস্যা হ্রাস করার জন্য সরকার মধ্যমেয়াদি কিছু কৌশল নিতে পারে, যা ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা যেতে পারে। এর মধ্যে রাস্তা পরিষ্কার ও রাস্তার ধুলা সংগ্রহের জন্য ম্যানুয়াল ঝাড়ুর পরিবর্তে সাকশন ট্রাক ও ভ্যাকুয়াম সুইপিং ট্রাকের প্রচলন করতে পারে। রাস্তার ধুলা থেকে দূষণ কমাতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ঢাকা শহরের বসবাসের জন্য আরো পৃথক সাইকেল লেন বাধ্যতামূলককরণ দূষণের মাত্রা কমানোর অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ হবে। শহর এলাকায় সঠিক বৃক্ষরোপণ ও ছাদে বাগান করার জন্য উৎসাহিত করা বায়ুমান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। উপরন্তু, এলাকাভিত্তিক ভূপৃষ্ঠের জলাধারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যেখানে বেশি সবুজ ও জলাধার রয়েছে, সেখানে বায়ুর গুণগত মানের একটি স্পষ্ট উন্নতি দেখা গেছে। যেমন ঢাকার ভেতরে তৃপ্তি, পিলখানা ও রমনা এলাকার বায়ুমান তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে যেখানে জলাধার নেই সেই এলাকাগুলো থেকে। অভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কমাতে ঘরের অভ্যন্তরে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত যান্ত্রিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ইট তৈরিতে উন্নত প্রযুক্তি চালু করা উচিত। প্রত্যেকটি জেলা শহরে নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়া বায়ুদূষণের পূর্বাভাস দেয়ার প্রচলন করতে হবে।

    সরকারের উচিত স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে একটি প্লাটফর্মে যুক্ত করে পৃথক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। তবে সরকার একা কিছু করতে পারবে না। এক্ষেত্রে জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। সঠিক দিকনির্দেশনা, জ্ঞান ও অনুপ্রেরণার মাধ্যমে জনসাধারণকে ঢাকা শহরের বায়ু ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করা যেতে পারে।

    Read on Newspaper
    • Tags:
    • Bonik Barta

    Leave a Comment Cancel Reply

    Your email address will not be published.*

    Recent Article

    • আতশবাজির অসুস্থ প্রতিযোগিতা’ পরিবেশের জন্য একটি চিন্তা
    • কপ-২৮ এর সফলতা নির্ভর করছে জীবাশ্ম জ্বালানিকে ফেজ-আউট ঘোষণার ওপর
    • জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮-এর প্রথম সপ্তাহের লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডের অর্জন
    • জলবায়ু সম্মেলনে জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ
    • জলবায়ু সম্মেলনে তেলের যুগের অবসান ঘটানোর চুক্তি সম্ভাবনা

    Categories

    • Air Pollution (26)
    • Biodiversity (8)
    • Climate Change (34)
    • Global Warming & Climate Change (23)
    • Health and Population (5)
    • Heat Waves (1)
    • Lead (2)
    • Methane (2)
    • Noise Pollution (1)
    • Others (66)
    • Plastic (14)
    • Renewable Energy (2)
    • Soil (1)
    • Waste Management (2)
    • Water & River Pollution (5)

    Archives

    • January 2024 (1)
    • December 2023 (11)
    • September 2023 (4)
    • June 2023 (2)
    • May 2023 (2)
    • April 2023 (7)
    • March 2023 (6)
    • January 2023 (1)
    • December 2022 (2)
    • November 2022 (15)
    • October 2022 (3)
    • September 2022 (7)
    • June 2022 (6)
    • May 2022 (1)
    • April 2022 (1)
    • March 2022 (4)
    • February 2022 (1)
    • January 2022 (2)
    • September 2021 (2)
    • October 2020 (4)
    • September 2020 (17)
    • August 2020 (1)
    • April 2019 (1)
    • December 2018 (7)
    • November 2018 (4)
    • October 2018 (3)
    • September 2018 (7)
    • August 2018 (3)
    • July 2018 (5)
    • June 2018 (6)
    • May 2018 (4)
    • April 2018 (3)
    • March 2018 (2)
    • February 2018 (1)
    • June 2011 (1)

    Tags

    Ajker Patrika (9) BanglaVison News 24 (6) Bhorer Kagoj (6) Bonik Barta (6) BVNEWS24 (1) Daily Inqilab (4) Daily Jagaran (1) Daily Manobkantha (1) Daily Messenger (2) Daily Naya Diganta (4) Daily Star (3) Daily Sun (29) Dainik Amader Shomoy (4) Dainik Bangla (2) Desh Rupantor (1) Dhaka Courier (24) Dhaka Mail (2) Dhaka Tribune (6) JaijaidinBD (4) Jugantor (9) Kalbela (7) Kalerkantho (4) Kaler Kantho (3) New Naiton (1) New Natin (1) New Nation (35) Observer BD (3) Ocean Times BD (3) RisingBD (1) Samakal (12) Sara Bangla (5) ShareBiz (4) Sonali Kantha (1) Tadanta Chitra (1) The Business Standard (2) The Daily Sun (2) The Financial Express (6) The Financialexpress (3) ভোরের কাগজ (2) সমকাল (1)

    Center for Atmospheric Pollution Studies. 

    🗺️ 51 Siddeswari Road, Dhaka. 

    📧 info@capsbd.org

    Center for Atmospheric Pollution Studies (CAPS) © 2021 All Right Reserved