বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে মানুষ হাজার ধরনের খাদ্য খায় এবং পরবর্তী সময়ে নতুন স্বাদের খাবার খুঁজে বেড়ায় এবং এখানে থাকা মানুষগুলো ঠিক এ রকম যে, নতুন খাদ্য খোঁজার জন্য কখনোই দেরি করে না এবং নতুন রেসিপিগুলো খোঁজার জন্য সব সময় আগ্রহী। এই আকাক্সক্ষার জন্যই তৈরি হয় প্রতিটি ঘর, রেস্টুরেন্ট এবং এমনকি রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার। হ্যাঁ রাস্তায়, রাস্তার খাবারই বাংলাদেশে কখনো শেষ হবে না। এখানে শিশু থেকে বয়স্ক সবাই সবাই রাস্তার খাবার পছন্দ করে। রাস্তার খাবারের জন্য এই উন্মাদনার শেষ নেই। কিন্তু এই উন্মাদনা তাদের এতটা উন্মাদন করে তোলে যে, তারা কী খাচ্ছে তাও তারা জিজ্ঞাসা করে না।
এখন কেন আমরা নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে পারি না আমরা কি ভালো খাচ্ছি? কারণ আমরা বিষ খাচ্ছি। যখন আমি বিষ বলে থাকি, আমরা এটার প্রয়োজন মনে করি না যে, এটা আমাদের মেরে ফেলছে কিন্তু এটা আমাদের অসুস্থ করে ফেলছে। বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ এই দূষিত খাবারের শিকার। এমনকি যদি এই খাবার সুস্বাদুও হয় তবুও এটা কখনোই স্বাস্থ্যকর নয়। মার্কিনভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার সেন্টার ফর এনিমেল হেলথ অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি দ্বারা উদ্ধৃত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে ১০% প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যু খাদ্যের কারণে এবং পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের মাত্র ১৮%। এই ফলাফল থেকে আমরা সহজেই বলতে পারি যে, রাস্তার খাবার এতে খুব বড় ভ‚মিকা পালন করছে।
আবার মো. জাকিরুল হাসান, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সালাউদ্দিন, আবু হেনা আবিদ জাফর, মেঘান এল স্কট ও শাহীনুল আলমের গবেষণায় এসেছে যে, ঢাকা শহরে ১৮টি স্থানে চটপটি (বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় খাদ্য) বিক্রি হয়। তারা নমুনা গ্রহণ করে এবং তাদের গবেষণায় দেখা স্পষ্ট হয় যে, সংগৃহীত নমুনার একটি সাইট ব্যতীত অর্ধেকই ব্যাকটেরিয়াল দূষণ দ্বারা দূষিত। এই সংক্রমণগুলো ছিল Acinetobacter (৬৬%), Klebsiella spp(৫৪%), E. coli (৩%) এবং Proteus spp (০.৯%) ইত্যাদি। এই দূষিত চটপটি বা এই রকম অন্যান্য খাবার খাদ্যজনিত অসুস্থতা এবং খাদ্য জনিত মহামারী রোগের জন্য দায়ী।
নিরাপদ খাদ্যবিধি ২০১৩-এর ৫ম অধ্যায় ২৩ অনুচ্ছদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি অথবা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য বা উহার উপাদান বা বস্তু (যেমন ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, সোডিয়াম সাইক্লামেট), কীটনাশক বা বালাইনাশক (যেমন-ডিডিটি, পিসিবি তৈল, ইত্যাদি), খাদ্যের রঞ্জক বা সুগন্ধি, আকর্ষণ সৃষ্টি করুক বা না করুক, বা অন্য কোনো বিষাক্ত সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়া সহায়ক কোনো খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্য উপকরণে ব্যবহার বা অন্তর্ভুক্ত করিতে পারিবেন না অথবা উক্তরূপ দ্রব্য মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্য উপকরণ মজুদ, বিপণন বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।
নিরাপদ খাদ্যবিধি ২০১৩-এর ৫ম অধ্যায় ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নকল খাদ্য উৎপাদন, বিক্রয়, ইত্যাদি কোন ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে নিয়োজিত অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ১৯ নং আইন) এর অধীন নিবন্ধিত কোনো ট্রেডমার্ক বা ট্রেড নামে বাজারজাতকৃত কোনো খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্য উপকরণের অনুকরণে অননুমোদিতভাবে কোনো নকল খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্য উপকরণ উৎপাদন, আমদানি, মজুদ, সরবরাহ বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না। খাদ্য সুরক্ষা আইন ২০১৩ অনুযায়ী এই দুটি আইনের অধীনে শাস্তিমূলক, শাস্তিযোগ্য এবং অজামিনযোগ্য হবে। তাই এখন আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব ফেলতে চলেছি তা নিয়ে আলোচনা করেছি, এক প্রশ্ন এসে দাঁড়াচ্ছে কীভাবে আমরা এটি বন্ধ করব?
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রাস্তার খাবার নিরাপদ এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতি নিশ্চিত করার জন্য একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে, প্রশিক্ষিত বিক্রেতাদের কাছে ৮০টি খাদ্য গাড়ি সরবরাহ করে। এই গাড়ি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। এই প্রশিক্ষিত বিক্রেতারা নগরীর যাত্রীদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহ করবে, যা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়ার কারণে মানুষের পেটের রোগের সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করবে। তাই একমত হওয়া যায় যে, স্বাস্থ্যকর খাবারই আমাদের প্রয়োজন।
